সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটা বেঁচে থাকার কল্পকথা

                           মুগ্ধতা

                                        - Labib 

আমার মুগ্ধ হবার ক্ষমতা কমে গেছে। একটা সময় ছিল যখন ভোর চারটা বাজে একটা বই শেষ করে মলাটের শেষে লেখকের ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে
আবার প্রথম পৃষ্ঠা থেকে পড়া শুরু করেছি। বৃষ্টির দিনে কনস্ট্রাকশন ভবনে বাঁশের খুটিতে দাড়িয়ে থাকা রঙ মিস্ত্রীকে কাঁপতে দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম।
এক একটা সাদামাটা গানকে মনে হত, এর একটা জ্যান্ত শরীর আছে, কপালের নিচে দুটা কাজল মিশ্রিত চোখ আছে। দুয়োর বন্ধ করে গান রিপিট দিয়ে সেই চোখের দিকে তাকালে মনে হত প্রিয়তমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি!! গ্রামের বাড়ির উঠানে সিডি ভাড়া করে বাণিজ্যিক হিন্দি সিনেমা দেখে যে আনন্দ হয়েছিল; কোথায় যে হারিয়ে গেলো।
আমার মুগ্ধ হবার ক্ষমতা কমে গেছে, ভার্সিটির লাইফে স্যার গুলো যখন কেরানি মার্কা রসিকতা করে ছাত্রদের হাসানোর চেষ্টা করত, আমি তখন দাঁতে দাঁত কেলিয়ে শক্ত হয়ে বসে থাকতাম।
আমার কষ্ট পাবার ক্ষমতা কমে গেছে। একটা সময় ছিল যখন মুরগির বাচ্চা জবাই করার সময় চোখ মিটমিট করে যেভাবে আমার দিকে তাকাত, মনে হত সে যেন আমার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইছে ; কষ্ট হত খুব। অর্ধেক শরীর রাস্তার আইলেনে আর অর্ধেক শরীর রাস্তায় ফেলে দেয়া পাগলীর শরীর দেখে কষ্ট পেতাম।
শীতের রাতে জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটতে বের হতাম, মৌলিক কোন দুঃখ না থাকলেও কোথায় যেন একটা দুঃখ থাকত !! দুঃখটা এমন যে এর কোন নির্দিষ্ট কারণ নেই। আমার কষ্ট পাবার ক্ষমতা কমে গেছে এর মানে এই না যে আনন্দ পাবার ক্ষমতা বেড়ে গেছে। নদীর স্রোতে ভাসতে থাকা মানুষের লাশের মত, স্রোত বাড়ুক অথবা কমুক , তার আর কিছুই আসে যায় না।
আমার আমাকে চেনার ইচ্ছেটা বেড়ে গিয়েছে। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় গুলো কাটাতে চাই একান্তই নিজের সাথে। আয়নার মানুষটার দিকে তাকালে প্রথমে খুব চেনা লাগে, আরও কিছুক্ষণ তাকালে অচেনা লাগে, আরও কিছুক্ষণ তাকালে এত চেনা লাগে যে, ভয় হয় খুব।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন